বাংলাদেশের শিল্পের মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে পর্যটন শিল্প | দেশের মোট জিডিপির শতকরা 4.4% নিয়ে আসছে এই শিল্প থেকে, প্রতিবছর তার পরিমাণ আরও বাড়ছে তাই বলা যায় নিকট ভবিষ্যতে পর্যটনশিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা পালন করতে যাচ্ছে তাই আমাদের আজকে বলব পর্যটন শিল্পের বর্তমান অবস্থা সীমাবদ্ধতা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে |
আপাতদৃষ্টিতে পর্যটন শিল্পের উন্নতি মনে হলেও ব্যাপারটা পুরোপুরি সেরকম না এসে দেশগুলোর মধ্যে শুধু পাকিস্তানি বাংলাদেশের থেকে পেছনে রয়েছে তাছাড়া আমরা বাকি সবার থেকে অনেক পিছিয়ে আছি আবার পর্যটন আইএর 97% আসছে পর্যটন থেকে, এটি প্রমাণ করে যে বিদেশী পর্যটকদের কাছে আমাদের জনপ্রিয়তা কম এখন বিগত কয়েক বছর ধরে দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ |
জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে 2018 সালে দক্ষিণ এশিয়ার পর্যটন আই এসেছিল 19.4 বিলিয়ন ডলার এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পর্যটন আই ছিল 151.1 বিলিয়ন ডলার এই বিশাল এর মধ্যে বাংলাদেশের অবদান ছিল খুবই নগণ্য |
শুধুমাত্র মালয়েশিয়া ইন্দোনেশিয়া থাইল্যান্ড সিঙ্গাপুর থেকে 164 বিলিয়ন ডলার আয় এসেছে দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মোটা এর 96% অন্যান্য জনপ্রিয় পর্যটন দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে শ্রীলঙ্কা নেপাল ফিলিপাইন এবং মালদ্বীপ |
2010 থেকে 2018 পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পর্যটনের হার যথাক্রমে 10 শতাংশ এবং 8 পার্সেন্ট এই বিশাল সাফল্যে বাংলাদেশের অবদান নেই বললেই চলে তাহলে বাংলাদেশের এই পিছিয়ে থাকার সম্ভাব্য কারণ গুলো কি হতে পারে?
পশ্চিমা দেশের পর্যটকদের অভাব
বাংলাদেশে আসা মোট পর্যটক এর বেশিরভাগই ভারত থেকে আসে | বাকি পর্যটক গুলো আসে এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে | এছাড়াও মাত্র 5% ইউএসএ থেকে আসলেও তার মধ্যে বেশিরভাগই বাংলাদেশী প্রবাসী | 2018 সাল পর্যন্ত মোট পর্যটনশিল্পের বিশ্বব্যাপী ব্যয় ছিল 1.7 ট্রিলিয়ন ডলারযার মধ্যে আমেরিকান পর্যটকদের ছিল 334 বিলিয়ন ডলার |
এবং ইউরোপের 570 বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ বিশ্ববাজারে বর্তমান পর্যটনশিল্পের শতকরা 53% আমেরিকা এবং ইউরোপের করেছে যা থেকে আমরা অনেকটাই বঞ্চিত হচ্ছি অন্যদিকে এশিয়ার পর জনপ্রিয় পর্যটন দেশ থেকে আসা অর্থাৎ এশিয়ার বাইরে থেকে আসে 20 থেকে 71 পার্সেন্ট সেখানে আমাদের বাংলাদেশের সংখ্যা সাত পার্সেন্ট |
পর্যটন শিল্পে পর্যাপ্ত সুরক্ষার অভাব
বিদেশি পর্যটকদের জন্য শিক্ষা ব্যবস্থা অনেক বড় একটি ইস্যু বাংলাদেশের সন্ত্রাসবাদ অপহরণ চুরি কে কেন্দ্র করে 2019 এর এপ্রিলে মার্কিন পররাষ্ট্র ঢাকা এবং বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কে কেন্দ্র করে সর্তকতা জারি করা হয়েছে |
যা এখনো পর্যন্ত বহাল রয়েছে তবে তবে দা ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক এর সুরক্ষা সূচি অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশে 123 থেকে 105 নম্বর রেংকিং এ উন্নত করেছে |এতে বোঝা যায় পর্যটন শিল্পের জন্য বাংলাদেশ সুরক্ষা ব্যবস্থা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যাচ্ছে |
পর্যটন শিল্পে দেশীয় বিমান ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা
বিদেশি পর্যটকদের কাছে দেশকে প্রমোট করতে দেশীয় এয়ারলাইন্স গুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করলেও এশিয়ার বাইরে প্রতিষ্ঠানটি শুধু লন্ডন ফ্লাইট সার্ভিস দিয়ে থাকে যার ফলে বাকিদের পর্যটকদের জন্য বাংলাদেশের পরিবহন ব্যয় তুলনামূলকভাবে বেশি, তবে দুঃখজনক ভাবে বিমান পরিবহন ব্যবস্থা দিক থেকে আমাদের অবস্থান 111 তম যা সবচেয়ে পেছনে |
পর্যটকদের জন্য বাড়তি খরচ
পর্যটন শিল্পে উন্নত বেশকিছু দেশের পর্যটন ব্যয় এর তুলনায় বাংলাদেশের ব্যয় অনেকটাই বেশি কিন্তু সেই অনুপাতে সুযোগ-সুবিধা খুবই কম বাড়তি যাতায়াত খরচ থেকে শুরু করে মানে তুলনায় হোটেলগুলোর উচ্চমূল্যের কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয় প্রায়শই এটি অবশ্যই আমাদের জন্য একটি বড় প্রতিবন্ধক কেননা এর চেয়ে ভাল সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে অন্যান্য পর্যটন দেশগুলো |
পর্যটন শিল্পে পর্যাপ্ত মার্কেটিং এর অভাব
বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে প্রমোট করার জন্য 2010 সালে বাংলাদেশে পর্যটন বোর্ড প্রতিষ্ঠা করা হয় যার অধীনে বাংলাদেশকে নিয়ে একটি টিভি কমের্সিয়াল এবং পর্যটন বোর্ডের একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা হয় পর্যটন মেলা |
এবং প্রদর্শনের পাশাপাশি 2011 সালের ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মত বেশ কিছু কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকলেও পরবর্তীতে সে রকম কোনো উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি যদিও সাম্প্রতিক সময়ে ব্র্যান্ড হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান 97 থেকে 77 এসে দাঁড়িয়েছে তবে নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে প্রমোট করার জন্য আরও বেশকিছু মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি অবলম্বন করা যেতে পারে |
পর্যাপ্ত পর্যটন অবকাঠামোর অভাব
পর্যটন অবকাঠামোর দিক থেকে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান 109 তম এশিয়ার মধ্যে শুধু নেপাল ছাড়া বাকি সব দেশ থেকে পিছিয়ে আছে আমরা বিশেষ করে আমাদের ট্রান্সপোর্টেশন খুবই অনুন্নত দেশের মোট ভূমির মাত্র 7.5 দখল করে আছে সকল রাস্তাঘাট
সেই তুলনায় বেশি এর ফলশ্রুতিতে পরিমাণ বেড়েই চলছে অপরদিকে সড়ক দুর্ঘটনা একটি নিত্য নৈতিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের দেশে 2019 এ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে 4628 যার সংখ্যা বিগত বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি |
বাংলাদেশ পর্যটন শিল্পের বর্তমান অবস্থার কথা চিন্তা করে সরকার বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচ্ছে পরিকল্পিতভাবে পর্যটন শিল্পকে উন্নত করে দেশের অভ্যন্তরীণ ও বহির্মুখী পর্যটকদের আকর্ষণ করার লক্ষ্যে সরকার পর্যটন জন্য একটি মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নের প্রক্রিয়া শুরু করেছে |
ipe global নামে একটি ভারতভিত্তিক সেন্টেন্স ফ্রম এবং একটি horwath htl. কোম্পানির সাথে যৌথভাবে এবং এই প্ল্যান বাস্তবায়নের কাজ দেওয়া হয়েছে চুক্তি মোতাবেক আগামী 18 মাসের মধ্যে তারা দেশের সকল পর্যটক স্থান গুলো নিয়ে একটি রিপোর্ট জমা দিবে |
আওতায় তিন বছর মেয়াদী পাঁচ বছরের মধ্যে মেয়াদী এবং 15 বছরের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা রয়েছে দেশের পর্যটন ব্যবস্থার অবকাঠামো উন্নয়ন এবং উন্নতমানের মার্কেটিং করা এর মূল উদ্দেশ্য বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুবের ভাষ্যমতে বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের জন্য সম্ভাবনাময় |
সুযোগ সৃষ্টি করবেন যা বাংলাদেশকে এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে তিনি আরো বলেন দেশের প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রকে করা হবে পর্যটক বান্ধবী প্রচার করা হবে কক্সবাজারে অভিযোগ এবং সমস্যা সংক্রান্ত সেবা প্রদানের
জন্য বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস চালু করা হয়েছে এছাড়া আরো কিছু সুযোগ-সুবিধা প্রদান করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে সংস্থাটি পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে পার্বত্য জেলাগুলোতে কাজ শুরু করা হবে শেষ করে খাগড়াছড়ি রাঙ্গামাটি এবং চট্টগ্রামে এছাড়াও পর্যটকদের
আকর্ষণের জন্য ইতোমধ্যে কক্সবাজারে ডাবল ডেকার বাস চালু করা হয়েছে ঢাকা ওয়াসার পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে এই সার্ভিসটি চালু করা হবে |
ভ্রমণ করার সুবিধার্থে সম্প্রতি বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত বিউটিফুল বাংলাদেশ নামে একটি বই ভ্রমণের জন্য বাজারে এসেছে দেশের পর্যটন স্থান কক্সবাজার কে জনপ্রিয় করে তোলার লক্ষ্যে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত
করার কাজ চলছে তাছাড়া কক্সবাজারে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের অধীনে থাকা হোটেল গুলোর সংস্কারের কাজ চলছে এতে করে বোঝাই যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা যদি পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়িত হতে পারে তাহলে কি বাংলাদেশের অর্থনীতি বলে ধারণা করা হচ্ছে |