পৃথিবীর 10 টি দামি ঘড়ি ব্র্যান্ডের মধ্যে চলে আসে রোলেক্স এর নাম | কিন্তু তার জনপ্রিয়তা এবং চাহিদা বাকি সব থেকেও বেশি এর কারণ লেখ অন্য তাদের উন্নত মানের ঘড়ি এবং ভালো মার্কেটিং স্ট্রাটেজি দিয়ে হাই রেঞ্জ ঘড়ির মার্কেট এর একটি বিশাল অংশ দখল করে রয়েছে রলেক্স |
ব্র্যান্ড এর পরিচিতি এবং এদের ব্র্যান্ড ভ্যালু এতই বেশি যে আপনি বিশ্বের যেকোন দেশে যান না কেন সবাই এক নামে রোলেক্স কে চিনবে দামি ঘড়ি হিসেবে | শুধুমাত্র তাই নয় বলা হয়ে থাকে যে আপনি যদি মিলিনিয়ার ক্লাসের ব্যক্তিদের মধ্যে একজন হতে চান তাহলে আপনার কাছে একটি রোলেক্স ব্র্যান্ডের ঘড়ি থাকায় লাগবে |
Why Rolex is so Expensive?
ঘড়ির মধ্যে সুইস ঘড়ির একটা আলাদা আবেদন সবসময়েই আছে। তার মধ্যেও রোলেক্সের আবেদনটা যেন একটু বেশীই। তবে রোলেক্সই যে সবচেয়ে দামী ব্র্যান্ড, এরকমটাও কিন্ত নয়। প্যাটেক ফিলিপ, ভ্যাশেরন কন্সটান্টিন, জেএলসি ইত্যাদি ব্র্যান্ডও দামের দিক দিয়ে রোলেক্সের চেয়ে খুব একটা পিছিয়ে নেই।
কিন্ত কারিগরি দিক থেকে রোলেক্স অনন্য, যেটি এর সমসাময়িক ঘড়ির ব্র্যান্ডগুলো থেকে একে আলাদা করে তুলেছে। মুভমেন্টের ভিত্তিতে ঘড়িকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হল কোয়ার্টজ মুভমেন্ট, যেটিতে একটি ব্যাটারির বিদ্যুৎ শক্তি দিয়ে ঘড়িগুলোর কাঁটা সঞ্চালিত হয়। অপরটি হচ্ছে মেকানিকাল মুভমেন্ট। এখানে ব্যাটারি ব্যবহৃত হয় না, বরং এটি এর মধ্যকার সঞ্চিত শক্তি থেকে ঘড়িগুলোর কাঁটা সঞ্চালিত করে।
![]() |
| স্প্রিংটি খুব সামান্য কম্পনেও কম্পিত হয় |
যখন পর্যন্ত কোয়ার্টজ ঘড়ি আসেনি, তখন ঘড়ি ছিলো আদতেই এক বিলাসবহুল বস্ত। অত্যন্ত ধনী ব্যক্তিরাই তাঁদের বিলাসিতা প্রকাশে হাতঘড়ি পড়তেন বা পকেটঘড়ি ব্যাবহার করতেন। এরপরে যখন পিজোইলেক্ট্রিসিটি আবিষ্কৃত হল, তখন কোয়ার্টজ ঘড়ি তৈরী হল, ফলে ঘড়ির দাম অনেকটাই কমে জনসাধারণের হাতের মুঠোয় চলে এলো।
সেই টেনিস থেকেই আমার রোলেক্সের সাথে পরিচয়। উইম্বলডনের সাথে রোলেক্সের এক অন্যরকম সম্পর্কই আছে বলা যায়। এমনকি বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপ উইম্বলডন এর স্বরণে রোলেক্স এই ঘড়িটি বাজারে ছেড়েছিলো।
কিন্ত রোলেক্সের এত দামের কারণ কি?
মেকানিকাল ঘড়িও তো অনেকেই বানাচ্ছে, আপনি যদি আরেক সুইস ব্র্যান্ড ওমেগার দিকে দেখেন, তাহলে দেখবেন তারাও প্রায় একই কোয়ালিটির ঘড়ি কিন্ত অনেক কম দামে বিক্রি করছে। রোলেক্সের দাম তাহলে এত কেন?
প্রথম কথা হচ্ছে রোলেক্সের ঘড়ি সংক্রান্ত গবেষণা বেশ শক্তিশালী। রোলেক্স তাদের ঘড়ির উন্নয়নের জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। তাদের নিজস্ব রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট গ্রুপ রয়েছে যেটির মাধ্যমে তারা শুধু নিজেদের ঘড়ির ডিজাইনই নয়,
বরং ঘড়িতে ব্যাবহৃত ধাতু নিয়েও গবেষণা করে। রোলেক্সের আর এন্ড ডি সেকশনে অত্যন্ত দামী কিছু যন্ত্রপাতি রয়েছে যেমন ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ, গ্যাস
স্পেকট্রোমিটার, যেগুলোর সাহায্যে তারা প্রতিনিয়ত ঘড়ি তৈরীর আরও সূক্ষ্ম উপায় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। রোলেক্সের সিরামিক সেকশন অন্যান্য সকল ব্র্যান্ডের তুলনায় অনেকখানি এগিয়ে আছে। যদিও তারা র্বতমানে শুধু বেজেলে সিরামিক ব্যাবহার করছে, কিন্ত তারা একই সাথে অন্যান্য অংশগুলোতেও সিরামিক ব্যাবহারের সম্ভাব্যতা নিয়ে কাজ করছে।
রোলেক্স এ ব্যাবহৃত সমস্ত পার্টসগুলো অন্যান্য সাধারণ মানের ঘড়ির তুলনায় অনেক উন্নত। উন্নত পার্টসের দামও তুলনামূলক অনেক বেশী হয় এবং এগুলো দিয়ে কাজ করাও বেশ মুশকিল।
মেকানিকাল ঘড়ি প্রস্তুতকরণে এমনিতেই প্রচুর ব্যয় হয়। এর যন্ত্রাংশগুলো অত্যন্ত সূক্ষ্ম, ফলে অত্যন্ত অভিজ্ঞ হাতে এই যন্ত্রাংশগুলোর সংযোজনের কাজ সম্পন্ন হয়ে থাকে এবং এটি হয়ে থাকে এমন একটি দেশে,রোলেক্সের নিজস্ব কারখানা আছে যেখানে তারা তিন ধরনের স্বর্ণ উৎপন্ন করে।
তাদের ল্যাবরেটরিতে বিশ্বমানের ধাতু বিশেষজ্ঞ রয়েছেন যারা সবসময়েই ঘড়ি প্রস্ততের জন্য আরও ভালো গুণগতমান সম্পন্ন ধাতু তৈরীর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রায় এক বছর যাবৎ রোলেক্সের এক একটি ঘড়ি প্রস্তত হওয়ার পরে এগুলোর গুণগত মান নিশ্চিত করা হয়। এই অংশটি খুবই সতর্কতার সাথে তদারকি করা হয়ে থাকে।
যেমন অয়েস্টার টেস্টে ঘড়িগুলো জলনিরোধকভাবে ঠিকঠাক কাজ করছে কি না সেটি দেখার জন্য আদর্শ মানের চেয়েও ১০ শতাংশ বেশী চাপে এগুলোকে পরীক্ষা করা হয়।
সবশেষে ফিনিশিং টাচ দেয়াটিকে রোলেক্স খুবই যত্নের সাথে করে থাকে। প্রত্যেকটি ঘড়িকে খুবই যত্নের সাথে মসৃণ করা হয়। অন্যান্য অনেক ব্র্যান্ড যেখানে রোবটের সাহায্যে যন্ত্রাংশের একত্রীকরণ করে থাকে
রোলেক্স তাদের ঘড়ি তৈরীর জন্য যতরকম সরঞ্জামের প্রয়োজন পড়ে সেগুলো তারা নিজেরাই তৈরি করে আর এই বিষয়টি ভক্তদের মনে একটা অন্য রকম প্রভাব ফেলে।
ক্যালিবার তৈরীতেও রোলেক্সের ধারেকাছে কেউ নেই। রোলেক্সের অন্যতম সেরা মাস্টারপিস ডেয়টোনা তে ব্যাবহৃত ক্যালিবার ৪১৩০ নিঃসন্দেহে সময়ের সেরা ক্যালিবার এবং এটির চলমান আপগ্রেডেশন এটিকে অন্যান্য ক্যালিবারগুলোর চেয়ে যোজন ব্যাবধানে এগিয়ে রেখেছে।
রোলেক্স ৪১৩০ ক্যালিবার ভেবে দেখুন, এতজন মানুষের শৈল্পিকবোধ, এতজন বিজ্ঞানীর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে উন্নততম যন্ত্রাংশ দ্বারা প্রস্ততকৃত একটি ঘড়ি, এতগুলো নির্ভুলতার ধাপ পেরিয়ে আপনার হাতে স্থান পাচ্ছে, সেই হিসেবে একটি রোলেক্সের ঘড়ির দাম কি খুব বেশী |



Good post.
ReplyDelete